জন্মলগ্ন থেকে তিনি ছিলেন রুগ্ন প্রকৃতির এক বালক।
অথচ স্কুলে দুষ্টমিতে সেরা ছিলেন। কিন্তু তা সত্ত্বেও
শিক্ষকগণ মুগ্ধ ছিল তাঁর অসাধারণ জ্ঞান-প্রতিভায়।
অসাধারণ মেধাবী সেই বিজ্ঞানী হচ্ছেন স্যার
আইজাক নিউটন। তিনি ছিলেন
একাধারে পদার্থবিজ্ঞানী, গণিতবিদ,
জ্যোতির্বিজ্ঞানী, প্রাকৃতিক দার্শনিক,
আলকেমিস্ট।
ঘটনা- ১
একদিনের মজার ঘটনা। ছোট্র নিউটন লক্ষ্য করলেন,
স্কুলের অধ্যক্ষের শ্যালক প্রায়ই
স্কুলে আসতে দেরি করতেন। চিন্তা করতে করতে হঠাৎ
তাঁর মাথায় বুদ্ধি আসলো। সেই মুহূর্তে নিউটন
বলে ওঠলেন, স্যার আপনার জন্য
একটা ঘড়ি তৈরি করে দিচ্ছি যা দিয়ে ঠিক
সময়ে স্কুলে আসতে পারবেন। কিন্তু নিউটন
ঘড়িটা তৈরি করলেন কিভাবে?
তিনি যে ঘড়িটা তৈরি করলেন সেই ঘড়ির
উপরে থাকতো পানির পাত্র। প্রতিদিন নির্দিষ্ট
ফোঁটা ফোঁটা পানি ঘড়ির কাঁটার উপরে পড়ত। এর
ফলে ঘড়ির কাঁটা আপন গতিতে এগিয়ে চলতো সামনের
দিকে। এভাবে সময় গণনা করা হতো। কেমন, মজার না!
ঘটনা- ২
এক রাতের ঘটনা। নিউটন বন্ধুকে সেই রাতে দাওয়াত
করেছিলেন। অথচ তিনি একদম ভুলে গিয়েছিলেন।
গণিতের এক জটিল সমস্যা সমাধানে তিনি গভীর
মগ্নতায় ডুবে ছিলেন। বন্ধুটি যথাসময়ে এসে তা লক্ষ্য
করলেন। ফলে চুপচাপ বসে রইলেন তাঁর অপেক্ষায়। বেশ
কিছুক্ষণ পর খাবার এলো। শুধু একজনের খাবার।
বন্ধুটি মনে করলেন, তার জন্যই এ খাবার আনা হয়েছে।
বন্ধুটি নিউটনকে বিরক্ত না করে চুপচাপ খাবার
খেয়ে ফেললেন। এর কিছুক্ষণ পর গণিতের সমাধান শেষ
করে বন্ধুর দিকে তাকিয়ে তো রীতিমত অবাক। এবার
তাঁর খেয়াল হলো, বন্ধুকে দাওয়াত করার কথা ভুলেই
গিয়েছিলেন। খাবারবিহীন প্লেটের দিকে নজর
পড়তেই বন্ধুকে বললেন, ‘ভাগ্যিস তুমি এসেছো।
নইলে তো বুঝতেই পারতাম না যে আমি এখনো খাইনি’।
এই ছিলো আত্মভোলা নিউটনের মজার কান্ড।
ঘটনা-৩
বিজ্ঞানী ও সাধকগণ কখনো কখনো এমন আত্মমগ্নতায়
বিভোর হন যেনো সবকিছুই ভুলে যান সেই সাধনার
মুহূর্তে। এমনিভাবে নিউটন কোন নতুন বৈজ্ঞানিক
ভাবনায় ডুবে থাকতেন। আরও একদিনের ঘটনা। একজন
লোক তাঁর বাড়িতে এসে একটা প্রিজম
(তিনকোণা কাঁচ) দেখিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, এর দাম
কত হতে পারে। সেই ব্যক্তি নিউটনের কাছে এই
প্রিজমটি বিক্রির জন্যই এসেছিল। এ সময় নিউটন
প্রিজমের বৈজ্ঞানিক গুরুত্বের
কথা বিবেচনা করে বললেন, এর প্রকৃত মূল্য নির্ণয়
করা তাঁর সাধ্যের বাইরে। ফলে লোকটি বেশি দাম
চাইল। নিউটন সেই দামেই প্রিজমটি কিনে ফেললেন।
তোমরা জেনে অবাক হবে, পরবর্তীকালে এই প্রিজম
থেকে তিনি উদ্ভাবন করেন বর্ণতত্ত্ব (The theory of color)|
বিজ্ঞানীর সংক্ষিপ্ত জীবনীঃ
এসো এবার আমাদের এই আত্মভোলা বিজ্ঞানীর
সংক্ষিপ্ত প্রোফাইল জেনে নিইঃ
নাম- স্যার আইজাক নিউটন।
জন্ম- ৪ জানুয়ারী, ১৬৪৩ এবং মৃত্যু- ৩১ মার্চ, ১৭২৭।
বাসস্থান- ইংল্যান্ড, জাতীয়তা-ইংরেজ।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠান- ট্রিনিটি কলেজ, কেমব্রিজ
বিশ্ববিদ্যালয়।
মূলত নিউটনের আগ্রহ ছিল গণিত ও বলবিজ্ঞানের উপর।
ট্রিনিটি কলেজে তিনি কেপলারের আলোকবিজ্ঞান
বিষয়ক সূত্রের উপর অধ্যায়ন করেন। এরপর
তিনি ইউক্লিডের জ্যামিতির প্রতি পড়াশুনায় অধিক
মনোযোগ দেন। স্নাতক শিক্ষা গ্রহণকালে নিউটনের
কিছু নিবন্ধের অনুসন্ধান পাওয়া যায়। ১৬৬৫
সালে স্নাতক ডিগ্রি লাভের সময়ে নিউটন তার
বিখ্যাত দ্বিপদী উপপাদ্য বিষয়ক সূত্র প্রমাণ করেন।
ঠিক একই সময়ে ফ্লাকসিয়নের পদ্ধতি আবিষ্কার
বিষয়ক প্রথম তত্ত্ব প্রদান করেন।
লিংকনশায়ারে নিউটন
গবেষণা চালিয়ে যেতে থাকেন। এখানে এসে রসায়ন
এবং আলোকবিজ্ঞান বিষয়ের উপর বিভিন্ন
পরীক্ষা কার্যক্রম অব্যাহত রাখেন। একই
সাথে চালিয়ে যেতে থাকেন তাঁর গণিত বিষয়ক
অধ্যায়ন। ১৯৬৬ সালে নিউটন তাঁর মহাকর্ষ তত্ত্ব
আবিষ্কারের সূচনা করেছিলেন।
১৬৪৭ সালে Philosophiac Naturalis pricipia Mathmatica
প্রকাশিত হয়। এই বইয়ের প্রথম খণ্ডে নিউটন গতিসূত্র
সন্বন্ধে আলোচনা করেছেন। তিনটি গতিসূত্র হল, i)
প্রত্যেকটি বস্তু চিরকাল সরলরেখা অবলম্বন
করে সমবেগে চলতে থাকে। ii) বস্তুর ওপর প্রযুক্ত বল
বস্তুর ভরবেগের পরিবর্তনের হারের সমানুপাতিক
এবং বল যেদিকে ক্রিয়া করে, ভরবেগের পরিবর্তনও
সেদিকে ঘটে। iii) প্রত্যেকটি ক্রিয়ার সমান বিপরীত
প্রতিক্রিয়া আছে।
দ্বিতীয় খণ্ডে নিউটন গ্যাস ও ফ্লুইড বস্তুর গতির
কথা আলোচনা করেছেন।
গ্যাসকে কতকগুলো স্থিতিস্থাপক অণুর
সমষ্টি ধরে নিয়ে তিনি বয়েলের সূত্র প্রমাণ করেন।
গ্যাসের উপর চাপের প্রভাব বিশ্লেষণ
করতে গিয়ে পরোক্ষভাবে শব্দ তরঙ্গের গতিবেগও
নির্ধারণ করেন।
তৃতীয় খণ্ডে মাধ্যাকর্ষণ তত্ত্ব
সন্বন্ধে খুঁটিনাটি বিষদভাবে আলোচনা করেন।
তিনি উপলব্ধি করেছিলেন মাধ্যাকর্ষণ শক্তির
প্রভাবেই সূর্যকে কেন্দ্র করে গ্রহগুলো ঘুরছে।
তেমনি পৃথিবীকে কেন্দ্র করে চাঁদ ঘুরছে।
১৬৭১ সালে তিনি লন্ডনের রয়াল সোসাইটির সদস্য
হিসেবে নির্বাচিত হন। ১৬৭২ সালে তাঁর প্রথম
বিজ্ঞান বিষয়ক গ্রন্থ ‘আলোক বিজ্ঞান’ প্রকাশিত
হয়। ১৬৮৪-১৬৮৬ সালে তিনি লেখেন তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থ
‘প্রিন্সপিয়া’। ১৬৮৯ সালে তিনি কেমব্রিজ
বিশ্ববিদ্যালয়ের পার্লামেন্ট সদস্য
হিসেবে নির্বাচিত হন। ১৬৯৬
সালে তিনি সরকারি টাকশালের ওয়ার্ডেন
এবং পরে প্রধান পদ লাভ করেন। ১৭০৩ সালে নিউটন
পেলেন এক অভূতপূর্ব সম্মান। তিনি রয়াল সোসাইটির
সভাপতি। আমৃত্যু তিনি এই পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন।